কাফি পারভেজ, জামালপুর প্রতিনিধি:
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চরআমখাওয়া ইউনিয়নের পাটাধোয়াপাড়া থেকে মৌলভীরচর পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে শুকনো মৌসুমে তীব্র নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। অসময়ে নদী ভাঙনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে।
অসময়ের এই ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে সানন্দবাড়ি বাজার, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের বসতভিটা-ফসলিজমি। এরই মধ্যে বিলীন হয়েছে শত শত বিঘা ফসলি জমি। কয়েক মাস আগে বর্ষাকালে ফেলা জিও ব্যাগ ভাঙনের ফলে ভেসে গেছে। অনেকে বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছেন নিরাপদ স্থানে। নিজেদের ভিটামাটি হারানোর অজানা আতঙ্কে দিন পার করছে নদীপারের মানুষ।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সানন্দবাড়ি বাজারের পশ্চিমপাশ, পাটাধোয়াপাড়া থেকে মৌলভীরচর এলাকার মন্ডলপাড়া, মৌলভীরচর মুন্সিপাড়া, চুনালীপাড়া, চিথুলীয়া, বাহির পশ্চিমপাড়া, পশ্চিম পাটাধোয়াপাড়া, পাটাধোয়পাড়া ও খোলাবাড়ীর বেশকিছু অংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানায়, গত দুই মাসে প্রায় পাঁচ শতাধিক বসতভিটা, দুইশত একর ফসলি জমি, পাটাধোয়াপাড়া জামে মসজিদ ও পাটাধোয়াপাড়া নূরানি হাফিজিয়া মাদ্রাসা নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হওয়া সানন্দবাড়ি বাজারটি নদীগর্ভে চলে যাবে।
এছাড়া সানন্দবাড়ি ডিগ্রী কলেজ, সানন্দবাড়ি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, সানন্দবাড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, মৌলভীরচর উচ্চ বিদ্যালয়, মৌলভীরচর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মৌলভীরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মৌলভীরচর আলিম মাদ্রাসা, সানারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সানন্দবাড়ি পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাটাধোয়াপাড়া ১ নম্বর খোলাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ পাটাধোয়াপাড়া, মন্ডলপাড়া, মৌলভীরচর এলাকা ভাঙনে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চরআমখাওয়া ইউনিয়নের পশ্চিম পাটাধোয়াপাড়া এলাকার আফছর আলী (৭৬) জানান, তিনি ১৪ বছর আগে তার বসতভিটা হারিয়েছেন। সেই পুরানো বসতভিটার স্মৃতি এখনো ভুলতে পারেনি। সেই স্মৃতিবিজড়িত বসতভিটার টানে বার বার নদীর পাড়ে ছুটে আসেন। এ পর্যন্ত ২০ বার ভাঙনের শিকার হয়েছেন তিনি। বসতভিটা-ফসলিজমি সব এই নদীতে চলে গেছে। এখন সব হারিয়ে তিনি নিঃস্ব। প্রায় ১৪ বছর আগে সরকারি সড়কে আশ্রয় নিয়েছেন। দুই মাসের ভাঙনে সেটাও হুমকির মুখে কিন্তু নদীর ভাঙনে কখনো শক্ত কোনো বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি।
সানন্দবাড়ি পশ্চিমপাড়া এলাকার মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, এ পর্যন্ত তাঁর বসতভিটাসহ ৬৮ বিঘা জমি নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে। ফসলি জমি ভেঙে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে জীবন-যাপন করছেন।
চরআমখাওয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম লাভলু বলেন, বর্ষাকালে নদীর ভাঙন তীব্র হয়। এই অসময়ের ভাঙনে শঙ্কায় পড়েছেন এলাকাবাসী। এ ভাঙন অব্যাহত থাকলে ঐতিহ্যবাহী সানন্দবাড়ী এলাকা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এতে হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, পুলিশ তদন্তকেন্দ্র, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা অস্তিত্ব শঙ্কটে পড়বে।
চর আমখাওয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জিয়াউল ইসলাম বলেন, এ অসময়ে নদীতে তীব্র স্রোত কখনো দেখা যায়নি। স্রোতের কারণে পূর্বপাড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। পাটাধোয়াপাড়া, মন্ডলপাড়া ও মৌলভীরচর ভাঙনের আশঙ্কায় রয়েছে। অসময়ের ভাঙনরোধ করতে না পারলে সানন্দবাড়ী বাজার বিলীন হয়ে যাবে। তাই এই ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, অসময়ে যে ভাঙন দেখা দিয়েছে, সেটা প্রতিরোধের জন্য একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই অনুমোদন পাবো। অনুমোদন পেলে এই ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া হবে।
Leave a Reply