কাফি পারভেজ, জামালপুর প্রতিনিধি:
রাত পোহালেই শনিবার বকশিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন। ভাগ্য নির্ধারণ হবে বকশিগঞ্জ পৌর অভিভাবকের। প্রচারণা চলছে ইশারা ইঙ্গিতে। প্রচারণার তুখোড় শব্দের ফাঁকে ভোটের অংক কষছেন ভোটাররা। কোন প্রার্থী, কিভাবে, কত ভোট পেতে পারেন চলছে তার মৌখিক হিসেব-নিকেশের সমীক্ষা। আবার সমর্থক ও ভোটারদের মাঝে টান-টান উত্তেজনা স্ব স্ব সমর্থিত প্রার্থী ভোট যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে আসতে পারবে কিনা। ভোটের প্রতিদ্বন্ধিতায় কোন প্রার্থীদের মধ্যে তুলনামূলক কমবেশি প্রতিযোগিতা হবে। তবে, তৃণমূলের কিছু ভোটারের বিশ্বাস, ভোটের অংক বড় কথা নয়। প্রতিদ্বন্ধিতার ভোট হলেও সুখে দু:খে যাকে কাছে পাওয়া যাবে সেই প্রতীকের প্রার্থী জয়ী হবে।’
বৃহস্পতিবার পৌর এলাকার কয়েকটি ওয়ার্ডের ভোটারদের সাথে কথা বলে শোনা গেছে, কোথাও সরল আবার কোথাও কঠিন ভোট অংকের কথা। তবে আভাস পাওয়া যাচ্ছে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্ধিতার। কে বেরুতে পারে ? কে হাসবে শেষ হাসি ? কে হবেন পৌর মেয়র ? তুমুল অংক কষেও ভোট সমীক্ষার শেষ ফলাফল বের করা যাচ্ছে না। নিজস্ব ভোটের বিন্যাসে বিজয়ের আশা করছেন চার মেয়র প্রার্থীর সমর্থকরা। তবে কোনো প্রার্থীর সমর্থকরাই হলফ করে বলতে পারেনি আমরাই বিজয়ী হব। সবাই একে অপরের মন্তব্য জানতে চাইছে। সমর্থক ভোটার ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের মন্তব্যে শোনা যায় পৌরসভা নির্বাচনে লড়াই হবে সেয়ানে সেয়ানে। যিনিই বিজয়ী হবেন খুব অল্প ভোটের ব্যবধানে। এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে ৯মার্চ ভোট গণনা পর্যন্ত। কে হবেন এই পৌর পিতা? ভোটাররা তাদের যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত মেয়রকে বরণ করতে প্রস্তুত। ভোট সুষ্ঠ হলে সব প্রার্থীই ফলাফল মেনে নিয়ে নির্বাচিত মেয়রকে স্বাগত জানাবেন বলেও জানিয়েছেন গণমাধ্যমকে।
নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকায় আওয়ামী লীগের তিন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। নিজ নিজ অব¯’ান জানান দিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য, দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটাররের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তারা। তুলে ধরছেন নিজেদের অবস্থান। তবে নৌকা প্রতীক না থাকায় স্থানীয় এমপির সমর্থনে পালটে যেতে পারে নির্বাচনে ভোটের হিসাব। এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় রাজনীতিবীদরা। তাদের ভাষ্যমতে পুরো উপজেলায় এমপির নির্ধারিত ভোট ব্যাংক রয়েছে। তিনি গোপনে বা প্রকাশ্যে যাকে সমর্থন দিবেন তিনিই বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন। আর এমপির ভাষ্যমতে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠ ও গ্রহনযোগ্য হবে। যার জনপ্রিয়তা ও গ্রহনযোগ্যতা আছে তিনিই নির্বাচিত হবেন। নির্বাচনে কারো হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই।
এদিকে গোটা পৌর এলাকার ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার জন্য সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রস্তুতি নিয়ে রয়েছেন। বকশিগঞ্জ পৌর উন্নয়ন উত্তরণে জনতার ভোটের রায় কোন পক্ষে গিয়ে দাঁড়াবে ? এই প্রশ্নটি সামনে রেখে অপেক্ষায় বকশিগঞ্জসহ সাড়া জেলার উৎসাহী জনগণ।
এবারের নির্বাচনে ৪ জন প্রার্থী মেয়র পদে, ৩টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ১১ জন ও ২৭ জন ৯টি সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
প্রার্থীদের মাঝেও উৎকণ্ঠার শেষ নেই জনগণের রায় পাচ্ছেন কিনা। প্রার্থীরা নিজেদের অবস্থান জানান দিতে দলীয় নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে সময় দিচ্ছেন। জগ প্রতীকের বর্তমান মেয়র নজরুল ইসলাম সওদাগরের সমর্থকরা নিজস্ব ভোট ব্যাংক সামলাতে ব্যস্ত। তারা নিজস্ব ভোটের বিন্যাসে বিজয়ের আশা করছেন। তারা মনে করেন, তাদের প্রার্থী নজরুল সওদাগর ইলেকশন উইন্যাবল হিরো। সওদাগরের পক্ষে নির্বাচনী মাঠে কাজ করছেন বড় ভাই সাবেক সফল ইউপি চেয়ারম্যান মানিক সওদাগর।
মোবাইল ফোন প্রতীকের ইসমাইল হোসেন তালুকদারের সমর্থকরা মাঠেও প্রচন্ডভাবে তৎপর রয়েছেন। তাদের কথা জনতার বিপুল ভোট তাদের ঝুড়িতেই আসবে। তালুকদার পরিবারের লোকজনের নির্বাচনী কৌশল প্রচন্ড তীক্ষè বুদ্ধির। ছোট ভাইকে জেতাতে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন ইলেকশন ম্যাকার হিসেবে পরিচিত বড় ভাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ তালুকদার।
অন্যদিকে, মো. ফকরুজ্জামান মতিনের সমর্থকরা বলছেন, এবার তাদের নারিকেল গাছ মার্কার পক্ষে ভোটের জোয়ার পুরো পৌর এলাকায়। মো. ফকরুজ্জামান মতিনের ইমেজ ভোটের মাঠে পজেটিভ প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করেছে। যা বিজয়ের জন্য সহায়ক হবে। এবার তার পক্ষে নীরব ভোট বিপ্লব হবে।
অপরদিকে সাবেক ছাত্র নেতা আনোয়ার হোসেন তালুকদার বাহাদুর রেলইঞ্জিন প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অর্থ এবং জনবল তেমন না থাকায় নির্বাচনী মাঠে সাড়া জাগাতে অনেক পিছিয়ে রয়েছেন।
দীর্ঘদিনের কোন সমস্যাটি বড়, কোনটি ছোট সেই বিচারে না গিয়ে নাগরিক সমস্যায় পৌরবাসীর প্রয়োজন একজন দায়িত্বশীল ও উদ্যোগী মেয়র। আশা-নিরাশার দোলায় দুলতে দুলতে স্বপ্ন এবং প্রত্যাশা চোখে রেখে ভোটাররা বেছে নেবেন প্রতীক ও তার মেয়র প্রার্থীকে। তারপর দেবেন ভোটের রায়।
জামালপুরের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বকশিগঞ্জ পৌর নির্বাচন হবে জনপ্রিয়তার ব্যারোমিটার ।
স্থানীয় সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠ ও গ্রহনযোগ্য হবে। সাধারণ ভোটাররা স্বাধীনভাবে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। যে প্রার্থী বেশি জনপ্রিয় এবং সাধারণ ভোটারের মাঝে গ্রহনযোগ্যতা আছে, তিনিই নির্বাচিত হবেন। এই নির্বাচনে কারো হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই।
Leave a Reply