কাফি পারভেজ, জামালপুর প্রতিনিধি:
ইসলামপুর উপজেলায় ৬টি ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব কমপ্লেক্স ভবন না থাকায় ডিজিটাল সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়াসহ প্রতিনিয়তই ভোগান্তিতে রয়েছে সাধারণ মানুষ।
সরকার গ্রাম পর্যায়ে ডিজিটালাইজ সেবা নিশ্চিত করলেও উপজেলার কুলকান্দি, বেলগাছা, চিনাডুলী, সাপধরী, নোয়ারপাড়া ও গোয়ালেরচর এই ৬টি ইউনিয়ন পরিষদ পিছিয়ে আছে। উপজেলায় ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন থাকলেও সাপধরী ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ১৯৯৩ সালে, কুলকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ১৯৯৬ সালে, বেলগাছা ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ২০০৫ সালে, নোয়ারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ২০০৬ সালে এবং চিনাডুলি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ২০১০ সালে যমুনা গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও এসব ইউনিয়ন পরিষদ স্থাপনে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
এই ৬ ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে, কিংবা বাজারের ভাড়াটে ঘরে ঝুলছে পরিষদের সাইনবোর্ড। আর সেখানেই চলে পরিষদের সভা-সমাবেশেসহ যাবতীয় কার্যক্রম। অন্যদিকে গুদামঘর না থাকায় টিআর, জিআর, ভিজিএফ, ভিজিডিসহ সরকারি বিভিন্ন রিলিফ সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রমে ভোগান্তিতেই পড়তে হয় জনপ্রতিনিধিদের।
উপজেলার নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের জন সাধারণ প্রতিনিয়তই হয়রানির শিকার হচ্ছে। প্রয়োজনের তাগিদে পরিচয়পত্র নিতে পারলেও ডিজিটালইজ সেবা থেকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে। অস্থায়ী কার্যালয়ে কোনো নেটওয়ার্ক নেই, বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই। নেই কোনো তথ্য সেবাকেন্দ্রও। ইচ্ছ করলেও জন সাধারণ তথ্য সেবাকেন্দ্রের সাধ গ্রহণ করতে পারছেনা। পরিচয়পত্র, লাইসেন্স, জন্ম-মৃত্যু সনদ ও তথ্য কেন্দ্র এবং গ্রাম্য বিচার পাওয়া থেকে দীর্ঘদিন যাবত বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।
সেবা নিতে আসা ওই ইউনিয়নে করিরতাইর গ্রামের রেজাউলের স্ত্রী পারভীন বেগম, সাদা মিয়ার স্ত্রী ফরিদা বেগমের ডিজিটালাইজ সেবা পেতে হয়রানী ও আক্ষেপের কথা জানান। এখানে কোনো নেটওয়ার্ক নাই, তাই তারা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
বেলগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক বলেন, ইউনিয়ন পরিষদটি অনেক আগে নদী গর্ভে বিলীন হওয়ায় গত কয়েকমাস আগে যমুনা নদীর এপার ও ওপার দুই পার্শে টিনসেড অস্থায়ী পরিষদ নির্মাণ করেছি। নির্ধারিত কোনো ইউপি ভবন না থাকায় কার্যক্রম পরিচালনা করা খুবই কষ্ট হচ্ছে।
চিনাডুলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জানান, অস্থায়ী টিনসেড ঘর তুলে কোনোমতে চলছে পরিষদ। নেট সমস্যার কারণে সেবা গ্রহিতাদের নানা ধরনের বিড়াম্বনা পোহাতে হয়। তাই অতি জরুরী স্থায়ী একটি ইউপি ভবন নির্মাণ প্রয়োজন।
একই অবস্থা উপজেলার, কুলকান্দি, সাপধরী, গোয়ালেরচর ইউনিয়নবাসীর। ইউনিয়নবাসীর দাবি স্থায়ীভাবে ভবন থাকলে সেবার মান নিশ্চিত হবে।
এলাকাবাসী জানায়, স্থায়ী ভবন না থাকায় পরিচয়পত্র, জন্ম সনদের প্রয়োজনেও চেয়ারম্যান, সচিবদের দেখা মেলা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। এলাকাবাসী আরো জানায়, প্রতিবারই যিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তার বাড়িতে অস্থায়ী কার্যালয় হওয়ার ফলে নথিপত্র, সোলার প্যানেল, ডিজিটালাইজ যন্ত্রাংশ টানা হেচড়ায় বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে যায়।
এতে একদিকে সরকারের ক্ষতি অন্যদিকে ডিজিটালাইজ সেবা থেকে বঞ্চিত হয় ইউনিয়নবাসী। তারা প্রশাসনের নিকট আবেদন জানিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণসহ ডিজিটালাইজ সেবার মান নিশ্চিত করার দাবি জানান এলাকাবাসী।
ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, তিনি ইতিমধ্যে পরিষদগুলো পরিদর্শনও করেছেন। নদী যাতে আর ভাঙতে না পারে, সেই দিক নজর রেখেই ৩টি ভবন নির্মাণের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রস্তাবনা পাঠিয়েছেন।
Leave a Reply