কাফি পারভেজ, জামালপুর প্রতিনিধি:
জেলার বকশিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৯ বছর আগে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও জনবল ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে শুরু হয়নি কার্যক্রম। ৩১ শয্যার কাঠামোয় এখনো চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। ছোটখাটো সমস্যার জন্য রোগীদের যেতে হচ্ছে জেলা সদর হাসপাতাল কিংবা প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। ফলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়েছেন এ উপজেলার মানুষ।
জানা গেছে, বকশিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে চিকিৎসক থাকার কথা ৪১ জন। অথচ চিকিৎসক আছেন মাত্র পাঁচজন। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিরও অভাব রয়েছে। এসব কারণে চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগীরা। দারিদ্রপীড়িত এ অঞ্চলের মানুষের কথা ভেবে ২০১৩ সালের ১৩ অক্টোবর ৩১ শয্যার এই হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে ২০১৫ সালের ১৩ জুলাই এর উদ্বোধন করেন সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ। তবে উদ্বোধনের ৯ বছরেও চালু হয়নি ৫০ শয্যার কার্যক্রম। দেওয়া হয়নি প্রয়োজনীয় জনবল ও যন্ত্রপাতি। এখনো কাটেনি ৩১ শয্যার জনবল সংকট । ৩১ শয্যার হাসপাতালে চিকিৎসক থাকার কথা ২০ জন। আর ৫০ শয্যার হাসপাতালে চিকিৎসক থাকার কথা ৪১ জন। কিন্তু বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক আছেন মাত্র পাঁচজন। নার্সসহ অন্যান্য পদেও লোকবল সংকট।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ৫০ শয্যার জন্য শুধু প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া গেছে। ৫০ শয্যার হাসপাতালে যতজন চিকিৎসা কর্মকর্তা থাকার কথা, তার সবক’টি পদই শূন্য । শূন্য রয়েছে জুনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (নাক, কান, গলা), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু),জুনিয়র কনসালটেন্ট (মডিসিন),জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থো),জুনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালটেন্ট শিশু, এ্যানেসথেসিয়া, এ্যানেসথেটিক্স বিশেষজ্ঞের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদও।
এছাড়াও আরএমও, ইনডোর মেডিকেল অফিসার, প্যাথলজি, নার্সিং সুপারভাইজার, সিনিয়র স্টাফ নার্স জন, কার্ডিওগ্রাফার, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, ইমার্জেন্সি এটেনডেন্ট, ল্যাবরেটরি এটেনডেন্ট, মিডওয়াইফ, মেডিকেল টেকনিক্যাল ল্যাব, ফার্মাসিস্ট, প্রধান সহকারী, হিসাব রক্ষক, পরি”ছন্নতা কর্মী, ওটি বয়ের পদও শূন্য রয়েছে। আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন থাকলেও জনবলের অভাবে ব্যবহার হয়নি কোনোদিন।
হাসপাতালের একটি মাত্র অ্যাম্বুলেন্স দীর্ঘদিন ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। অপারেশন থিয়েটার রুম থাকলেও নেই মেশিনপত্র। ছোটখাটো কোনো অপারেশনের জন্য যেতে হয় জেলা সদর হাসপাতাল কিংবা প্রাইভেট ক্লিনিকে। ইসিজি মেশিন রয়েছে, তবে জরুরি প্রয়োজনে বেশিরভাগ সময়ই থাকে বিকল। ফলে ৫০ শয্যা এ হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে শুধু পরামর্শই পান রোগীরা।
বকশিগঞ্জ উপজেলাটি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত ঘেঁষে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে জামালপুর জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা এটি। ৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ উপজেলার ৩ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসাস্থল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হলেও, প্রতিবেশী শেরপুরের শ্রীবর্দী উপজেলা, কুড়িগ্রামের রাজিবপুর-রৌমারী ও জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলের ৫ থেকে ৬টি ইউনিয়নের মানুষ বকশিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন।
বকশিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে রোগীরা জানান, এ হাসপাতালে সময় মতো ডাক্তার পাওয়া যায় না। সব ওষুধ এখানে পাওয়া যায় না। বেশিরভাগই বাইরে থেকে কিনতে হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ আজিজুল হক বলেন, ৫০ শয্যার শুধু প্রশাসনিক অনুমোদন ও অবকাঠামো রয়েছে। জনবল সংকটসহ নানা সমস্যার কথা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই সংকট কেটে যাবে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ-সদস্য নূর মোহাম্মদ বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জনবল সংকটসহ সব সমস্যা চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিতে বলা হয়েছে।
Leave a Reply