কাফি পারভেজ, জামালপুর প্রতিনিধি:
জামালপুর শহরে যানজট নিরসনে ছয় বছর আগে শহরের রেলগেট এলাকায় ওভারপাস নির্মাণের কাজ শুরু হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারায় প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে পাঁচ দফায়। ব্যয় বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। তবু ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ছয় বছরেও শেষ হয়নি।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) জামালপুর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতি ঘণ্টায় ট্রেন চলাচলের কারণে জামালপুর শহরের ব্যস্ততম প্রধান সড়কের গেটইপাড় এলাকায় প্রতিদিন যানজট লেগে থাকায় দুর্ভোগে পড়েন হাজার হাজার যাত্রী। জনদুর্ভোগ দূর করতে ২০১৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্প শুরু করে সড়ক বিভাগ। প্রকল্পে ৭৮০ মিটার ওভারপাসসহ দুই পাশে পাকা সড়ক নির্মাণ কাজ ধরা হয়। ২১১ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও বর্তমানে এই প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ৪৫০ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে তমা কনস্ট্রাকশন, মেসার্স জামিল ইকবাল ও মইন উদ্দিন বাশী নামের তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতায় সাড়ে ছয় বছরেও কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
সরেজমিনে দেখা যায়, ৫২টি গার্ডার বিশিষ্ঠ শহরের জাহেদা শফির মহিলা কলেজের সামনে থেকে লম্বাগাছ পর্যন্ত ওভারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে। এই রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ কাজ শুরুর পর শহরের তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় প্রতিদিন। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ে শহরের মানুষ। বছরের পর বছর ধরে নির্মাণকাজ চলায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এলাকার ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। নির্মাণ কাজের জন্য গেইটপাড় এলাকায় যে যানজটের সৃষ্টি হয় তার প্রভাব পড়ে পুরো শহর জুড়ে। বর্তমানে রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ওভারপাসের উপরের কিছু অংশের পিচ ঢালায়ের কাজ চলছে। তবে নিচের রাস্তা ও অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ শেষ হয়নি। সড়কের দুইপাশে খানাখন্দে ভরা। বড় বড় গর্ত আর ভাঙাচোরার কারণে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করছে। সড়কের মধ্যে বালু, পাথর, ইট রাখা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে কাঁদা পানি জমে আছে। আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরে ভোগান্তীতে পড়েছে জামালপুরবাসী।
এখানকার কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, ছয় বছর ধরে নির্মাণকাজ চলছে। জাহেদা শফির মহিলা কলেজের সামনে থেকে লম্বাগাছ পর্যন্ত সড়কের বেহাল অবস্থা। সামান্য বৃষ্টি হলেই হাঁটুপানি জমে যায়। সেই পানির আর নেমে যাওয়ার পথ নেই। সব সময় যানজট লেগেই থাকে। ফলে এই এলাকায় ক্রেতা ও সাধারণ মানুষ এখন সহজেই আসতে চান না। এ জন্য তাঁরা আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। শহরের যানজট কমাতে নেওয়া তাদের স্বপ্নের রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্পটি এখন শহরবাসীর গলার কাঁটা’হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধীরগতির কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। সওজের উদাসীনতাকেও দায়ী করছেন তাঁরা।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি জামালপুর জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জালাল হোসেন বলেন, ১৫ থেকে ২৫ লাখ পর্যন্ত জামানত ও দোকানভাড়া দিয়ে ব্যবসা করতে হয়। কিন্তু এই ওভারপাসের কারণে সব ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দ্রুত ওভারপাস নির্মাণের জন্য ব্যবসায়ীরা বহু চেষ্টা তদবীর করেছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় তত্ত্বাবধায়ক শরিফুল ইসলাম বলেন, কাজে তাঁদের কোনো গাফিলতি নেই। দীর্ঘ সময় ধরে সওজ জায়গা বুঝিয়ে দিতে পারছিল না। ফলে কাজের ধীরগতি ছিল। তবে এখন পুরোদমে কাজ চলছে। প্রকল্পের বেশির ভাগ ব্যয় বেড়েছে ভূমি অধিগ্রহণে। কাজের ক্ষেত্রে ব্যয় সামান্যই বেড়েছে। আগামী জুনের মধ্যে অবশ্যই কাজটি শেষ করা হবে।
জামালপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নওয়াজিস রহমান বিশ্বাস জানালেন, শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতির কাজ চলছে। ওভারপাসটি যানচলাচলের জন্য চালু করা গেলে দীর্ঘদিনের দুভোগ লাগব হবে।
Leave a Reply