কাফি পারভেজ, জামালপুর প্রতিনিধি:
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ছাবেদা চাঁন বালিকা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং (পরিচালনা) কমিটির সভাপতির বড় স্ত্রী প্রধান শিক্ষক হলেও তিনি কর্মস্থলে নিয়মিত উপস্থিত থাকেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রধান শিক্ষক ঢাকায় থাকার সুবাধে সভাপতির ছোট স্ত্রী প্রধান শিক্ষকের প্রক্সি দিচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের কলাকান্দা গ্রামে ২০০৪ সালে ছাবেদা চাঁন বালিকা নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন স্থানীয় বাসিন্দা ছামিউল আলম ছামু। পরে ২০১৫ সালে বিদ্যালয়টি উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে উন্নতি করা হলে নামকরণ করা হয় ছাবেদা চাঁন উচ্চবিদ্যালয়। বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা ছামিউল আলম ছামু তাঁর বড় স্ত্রী লাভলী আক্তারকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দিয়ে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করেন। পরে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে আসীন হয়ে ছামিউল আলম ছামু তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী মুসলিমা খাতুনকে নিয়োগ দেন সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে বিদ্যালয়টি নিম্নমাধ্যমিক পর্যন্ত এমপিও ভুক্ত হয়। এতে প্রধান শিক্ষক লাভলী আক্তারসহ ১২জন শিক্ষক ও পাঁচজন কর্মচারী সরকারি বেতন-ভাতার আওতায় অন্তর্ভুক্ত হন। বিদ্যালয়টির মাধ্যমিক পর্যায়ে এমপিও ভুক্ত না হওয়ায় সহকারী প্রধান শিক্ষক মুসলিমা খাতুন এখনো বেতন-ভাতার সুবিধা পাচ্ছেন না।
জানা গেছে, সহকারী প্রধান শিক্ষক মুসলিমা খাতুন প্রধান শিক্ষক লাভলী আক্তারের চেয়ারে বসে শিক্ষক হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরসহ বিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কাজও সারছেন। তবে এসব বিষয় নিয়ে বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষক-কর্মচারীরা মুখ খুলতে রাজি নন। তাঁদের অভিযোগ, আগে থেকেই ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছামিউল আলম ছামু হুঁশিয়ারি দিয়েছেন , বিদ্যালয়ের কোনো তথ্য যার মাধ্যমে প্রকাশ পাবে, তাঁর বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হবে।’ চাকরি হারানোর হুমকিতে মুখ বন্ধ রেখেছেন অন্যান্য শিক্ষক-কর্মচারীরা।
শিক্ষার্থীর অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছামিউল আলম ছামুর অনিয়ম-দুর্নীতিতে দিশেহারা অন্যান্য শিক্ষক-কর্মচারী। দীর্ঘদিন থেকে প্রধান শিক্ষক লাভলী আক্তারের চেয়ার বসে প্রক্সি দিয়ে আসছেন সহকারী প্রধান শিক্ষক মুসলিমা খাতুন। চাকরি হারানোর ভয়ে অন্য শিক্ষকেরা অভিযোগ করেন না।
অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক লাভলী আক্তার বলেন, আমি ঢাকায় বসবাস করি। প্রধান শিক্ষক পদে অন্য কেউ প্রক্সি দেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। প্রতিদিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত না হলেও যখন কাজ থাকে, তখন ঠিকই বিদ্যালয়ে যাই।
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মুসলিমা খাতুন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নয়। আমি প্রধান শিক্ষক পদে প্রক্সি দেইনা। তবে প্রধান শিক্ষক কোনো কারণে অনুপস্থিত থাকলে, সেদিন নিয়মানুযায়ী আমাকে দায়িত্ব পালন করতে হয়।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছামিউল আলম ছামু বলেন, আমার বড় স্ত্রী লাভলী আক্তার বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক। সে ঢাকায় বসবাস করে। প্রতি সপ্তাহেই সে বিদ্যালয়ে হাজির হয়। প্রধান শিক্ষকদের প্রতিদিন বিদ্যালয়ে আসা লাগে না। এতে দোষের কোনো কিছু দেখছি না। মূলত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আমাদের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আরিফা আক্তার কাকলী বলেন, ওই বিদ্যালয়ের প্রক্সি শিক্ষকের বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ঘটনার সত্যতা যাচাই করব।
দেওয়ানগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জাহিদ হোসেন প্রিন্স বলেন, প্রধান শিক্ষকের স্থলে সহকারী শিক্ষকের প্রক্সি দেওয়ার কোনো বিধান নেই। এ ছাড়া ঢাকায় থেকে এলাকায় চাকরি করারও সুযোগ নেই। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply