কাফি পাভেজ, জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুরের পাঁচটি সংসদীয় আসনের মধ্যে দুই নৌকার মাঝি ফুরফুরে মেজাজে স্বস্তিতে থাকলেও তিন নৌকার মাঝি আছে মহান দুশ্চিন্তায়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ যতই ঘনিয়ে আসছে তিন নৌকার মাঝি দুশ্চিন্তার কপালের ভাঁজ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নৌকার মাঝি বনাম স্বতন্ত্র নৌকার মাঝির মধ্যে হবে জমজমাট ভোটের লড়াই।
জামালপুর-১ (দেওয়ানগঞ্জ-বকশিগঞ্জ) সংসদীয় আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ নূর মোহাম্মদ প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন দুই প্রার্থীর সাথে। ভোট কেন্দ্রে ভোটার বাড়ানোর জন্য নৌকার প্রার্থী নির্বাচনী গণসংযোগ করলেও লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী এস এম আবু সায়েম প্রায় সময় রাজধানীর ঢাকায় সময় পার করছেন। মাঝে মধ্যে নির্বাচনী এলাকায় দেখা গেলেও নির্বাচনী প্রচারণা চোখে পড়ে না। নৌকার প্রার্থী অনেক আগে থেকেই সাধারণ মানুষের নিকট গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠায় নূর মোহাম্মদ এ আসনে নিশ্চিত।
জামালপুর-২(ইসলামপুর) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী ধর্ম প্রতিমন্ত্রী সংসদ সদস্য ফরিদুল হক খান দুলাল মহা চিন্তায় আওয়ামী লীগের তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জাপার প্রার্থী নিয়ে। আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ শীর্ষ নেতারা দলীয় তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে কাজ করছেন। এ পরিস্থতিতে নৌকার প্রার্থী ফরিদুল হকের বিজয় এবার কঠিন হবে বলে স্থানীয়ভাবে আলোচনা চলছে। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মোস্তফা আল মাহমুদ এ আসনে শক্তিশালী প্রার্থী। তৃনমূল বিএনপি’র প্রার্থীর প্রচারনা নেই বললেই চলে। আওয়ামী লীগের ফরিদুল হক খান দুলালকে ঠেকাতে আওয়ামী লীগের তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী এক হওয়ার কথাও মাঠে রয়েছে। শেষ পর্যায়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নিয়েও হচ্ছে আলোচনা। এ আসনে ভোট নিয়ে ফরিদুল হক খান ও তাঁর সমর্থকেরা দুশ্চিন্তায় আছেন।
জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) এ সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। জাপা এবং জেপি’র প্রার্থী থাকলেও আওয়ামী লীগের কোন স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় প্রতিদ্বন্ধিতা হবেই না। মির্জা আজম এমপি নৌকার মাঝি হয়ে আবারও তিনি টানা সাতবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পথে। শক্তিশালী প্রার্থী না থাকায় ফুরফুরে মেজাজে মির্জা আজম এমপি তাঁর নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ না করে জামালপুর-৫ সদরের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার প্রচারনায় মহাব্যস্ত। তিনি সদরের বিভিন্ন ইউনিয়নের জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিতি থেকে বক্তব্য দিয়ে নৌকার ভোট চাচ্ছেন।
জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ি) এ আসনে সাত জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা: মুরাদ হাসান। তাকে বাদ দিয়ে নৌকার প্রার্থী দিয়েছেন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছসেবক লীগের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান হেলালকে। দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় ডা: মুরাদ হাসান ঈগল প্রতীক এবং রাজধানীর তেজগাঁ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি, জামালপুর জেলা ও সরিষাবাড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শিক্ষাবিদ আব্দুর রশীদ ট্রাক প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে লড়ছেন। নৌকার প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগের দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে হবে তুমুল ভোটযুদ্ধ। মাঠ জরিপে আওয়ামী লীগের দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীই অনেকটা এগিয়ে রয়েছে। দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীই শক্তিশালী হওয়ায় নৌকার প্রার্থী দুশ্চিন্তায়। বাকি চার প্রার্থীর প্রচার প্রচারণা নেই বললেই চলে।
জামালপুর-৫(সদর) এ আসনে নৌকার প্রার্থী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মূখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ। এ আসনেও সাত জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। অন্য প্রার্থীদের তেমন প্রচারনা না থাকলেও আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থী এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য মো. রেজাউল করিম রেজনু’র ঈগল প্রতীকের সাথে নৌকার প্রার্থীর ভোটের যুদ্ধ জমজমাট হয়ে উঠেছে। নৌকার প্রার্থীর প্রেস্টিজ ইস্যুর লড়াই হবে বলে বর্তমান ও সাবেক আমলারা এসে নৌকার পক্ষে প্রচারে অংশ নিয়ে সাধারণ ভোটারদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজনু। দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঈগল প্রতীকের নির্বাচনী প্রচারনায় ভোট প্রার্থনা করছেন। অপরদিকে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে এক পক্ষ নৌকার ভোট এবং অপর পক্ষ ইশারা ইংগিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঈগল প্রতীকের ভোট চাচ্ছেন। এ নিয়ে নৌকার প্রার্থী মহা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
Leave a Reply