কাফি পারভেজ, জামালপুর প্রতিনিধি:
জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনে ভোট কারচুপি, জালিয়াতি করে ফলাফল ঘোষণা, নৌকার এজেন্টদের মারধরের অভিযোগে পুনঃনির্বাচন বা ভোট পুনঃগণনার দাবি জানিয়েছেন নৌকার প্রার্থী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান হেলাল।
আজ মঙ্গলবার সকালে নৌকা প্রতীকের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলন তিনি এ দাবি জানান। এসময় তিনি একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধীদের ভূমিকায় আ.লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকদের হামলা-ভাঙচুর, মারধর, হুমকি ও লুটতরাজের বিবরণ তুলে ধরেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান হেলাল লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করেন, নৌকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজধানীর তেজগাঁও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ মো. আবদুর রশীদ শুরু থেকেই নির্বাচনকে প্রভাবিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করতে হিংসাত্মক ও ধংসাত্মকসহ নানা অপকৌশল গ্রহণ করেন। নির্বাচনী হলফনামায় তাঁর মালিকানাধীন কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে অবস্থিত বিলাসবহুল রিসোর্ট থাকার তথ্য গোপন করেন। তথ্য গোপনের মধ্যদিয়ে প্রার্থিতা টেকার পর কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে দলের মধ্যে আভ্যন্তরিন বিরোধ সৃষ্টি করেন। ট্রাক প্রার্থীর ছোটভাই অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় নৌকা প্রার্থীর বিপক্ষে ও বড়ভাইয়ের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিভিন্নভাবে প্রভাব খাটান। নির্বাচনের দিন বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিরাগত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এনে ট্রাক প্রতীকের পক্ষে অন্যায় প্রভাব বিস্তার করেন।
পৌরসভার বিএনপি অধ্যূষিত কেন্দ্রগুলোতে বিএনপি নেতাদের সাথে সমঝোতা ও বিএনপি-জামায়াতের ভোটারদের কালোটাকার মাধ্যমে ট্রাক মার্কায় ভোট সংগ্রহ করেন। বেশকিছু কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ট্রাক প্রতীকে নিজেদের পুলিং এজেন্ট ও বহিরাগতের দিয়ে এবং ট্রাকের প্রার্থী নিজে উপস্থিত হয়ে গণহারে সিল মারে। এছাড়া প্রশাসনিকভাবে কাটছাট ও নয়-ছয় করে ট্রাক প্রতীকে বেশি ভোট দেখিয়ে নৌকাকে পরাজিত করা হয় বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
মাহবুবুর রহমান হেলাল আরও জানান, ট্রাক প্রতীক বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ও নৌকা পাগল মানুষদের এলাকাছাড়া করার মতো ঘৃণ্য পথ বেছে নিয়েছে। নৌকা সমর্থিত পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সরিষাবাড়ী অনার্স কলেজের উপাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান মোবাইলে নৌকার সমর্থক ব্যবসায়ী ফজলুকে মোবাইলে ২১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে ঢাকা থেকে ধরে এনে হত্যা, বাড়িঘর তছনছ ও ব্যবসা করতে না দেয়ার হুমকি এবং অকথ্য ভাষায় গালাগালি দেন।
তিনি আরও বলেন, নৌকার কর্মী-সমর্থকদের বাড়িবাড়ি গিয়ে হামলা-ভাঙচুর, মারধর, লুটতরাজ করা হচ্ছে। যা ২০০১ পরবর্তী বিএনপি-জামাতের নৃশংসতার এবং মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারীদের পারিবারিক চেহারা উন্মোচিত হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এসময় তিনি ভোট গণনার কিছু কাট-ছাট করা কপি ও অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেন। ম্যাজিস্ট্রের মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রার্থী হিসেবে তাঁকে কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি বলেও তিনি অভিযোগ করেন। দলের আদর্শবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত নেতাদের দল থেকে বহিষ্কার, আইনগত ব্যবস্থার মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত, তথ্য গোপন করায় ট্রাক প্রতীকের প্রার্থিতা বাতিল এবং নির্বাচনের পুনঃভোট গ্রহণ বা পুনঃগণনার দাবি জানান।
সাংবাদিক সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা এম এ লতিফ, উপজেলা বিআরডিবির সাবেক চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন পাঠান, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
Leave a Reply