কাফি পারভেজ, জামালপুর প্রতিনিধি:
জামালপুরের বকশিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদের জন্য নির্বাচনী প্রচারণা তুঙ্গে উঠেছে। নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে পাড়া-মহল্লাসহ সব জায়গায়। নির্বাচনের জোয়ারে ভাসছে পৌর এলাকার ভোটাররা। প্রার্থীরা ক্লান্তিহীনভাবে ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। তিন শক্তিশালী মেয়র প্রার্থী নির্বাচনী এলাকার রাজনৈতিক ময়দান উত্তপ্ত করে রেখেছেন। চার জন প্রার্থীর তিনজনই আওয়ামী লীগের। তারা হলেন, বর্তমান মেয়র পৌর যুবলীগের আহবায়ক নজরুল ইসলাম সওদাগর ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন তালুকদার এবং সদ্য বহিস্কৃত উপজেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব ফকরুজ্জামান মতিন। এদের মাঝে রয়েছেন আরো একজন মেয়র প্রার্থী বকশিগঞ্জ সরকারি কিয়ামত উল্লা কলেজের সাবেক ভিপি বকশিগঞ্জ উপজেলা শাখার শ্রমিক লীগের সদস্য আনোয়ার হোসেন বাহাদুর। প্রচার-প্রচারণা জনসংযোগের ধরন দেখে ইতিমধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কেমন হতে পারে।
২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত দ্বিতীয় শ্রেণির বকশিগঞ্জ পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ৩৫ হাজার ৫শ’ ১৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৭ হাজার ৫শ’ ৯জন এবং মহিলা ১৮ হাজার ৮ জন। আগামী ৯ মার্চ বকশিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের নির্বাচনে ভোটাররা প্রথমবারের মত ইভিএমে তাঁদের ভোট প্রদান করবেন।
এ ছাড়াও কাউন্সিলর পদে ২৭ ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ১১ জন প্রার্থী বিজয়ের মালা গলায় পড়তে চার মেয়র প্রার্থীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন তাদের নিজ নিজ এলাকা।
জানা যায়, বকশিগঞ্জ পৌরসভা গঠনের পর প্রথম ২০১৭ সালে ২৮ ডিসেম্বর বকশিগঞ্জ পৌর নির্বাচনে ১২টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ১টি কেন্দ্রে দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও জালভোটের জন্য প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মালিরচর হাজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করেন। পরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাহিনা বেগম সাতটি কেন্দ্রে পুন:নির্বাচনের দাবিতে হাইকোর্টে একটি রিট করেন। রিটের শুনানি গ্রহণ করে আদালত নির্বাচন স্থগিতসহ রুল জারি করেন। রুলের চূড়ান্ত রায় ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন ২০১৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি মালিরচর হাজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণা করেন। ১০ ফেব্রুয়ারি স্থগিত হওয়া একটি কেন্দ্রে পুন:নির্বাচনে জগ প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নজরুল ইসলাম সওদাগরের প্রাপ্ত মোট ৯ হাজার ৩৮৬ ভোট পেয়ে প্রথম পৌর মেয়র নির্বচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী বিএনপির প্রার্থী ধানের শীষ নিয়ে ফকরুজ্জামান মতিন ৭ হাজার ৭৬৮ ভোট পান এবং তৃতীয় হন আওয়ামী লীগ মনোনিত মেয়র প্রার্থী শাহীনা বেগম নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছিলেন ৫হাজার ১৬০। স্থগিত কেন্দ্রের মোট ভোট সংখ্যা ছিল ১হাজার ৫৮৩ ভোট।
নজরুল ইসলাম সওদাগর পৌর মেয়র হওয়ার পর থেকেই পৌর এলাকার সকল উন্নয়ন কাজে গতিশীলতা অব্যাহত রাখতে সফল হয়েছেন। সাংগঠনিক দক্ষতার গুনে পরিচিত হয়েছেন তিনি একজন দক্ষ পৌরপতি হিসেবে। এ পর্যন্ত পৌর এলাকায় প্রায় ৩০ কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ সমাপ্ত করেছেন। তার এ অল্প সময়ের সকল উন্নয়ন কাজের সফলতায় সাধারন ভোটাররা আবারও নজরুলকেই পৌরপিতা হিসেবে দেখতে চায়। নজরুল নির্বাচনী মাঠে এগিয়ে এবং শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন। পৌর এলাকার ১২ ওয়ার্ডের সব এলাকাতেই নজরুল সভা-সমাবেশ-বৈঠক করে তার অবস্থানকে ক্রমান্বয়ে মজবুত করেছেন।
মেয়র পদে অপর দুই শক্তিশালী প্রার্থী ইসমাইল হোসেন তালুকদার (মোবাইল ফোন) এবং ফকরুজ্জামান মতিন (নারিকেল গাছ) প্রতীক নিয়ে জগ প্রতীকের নজরুল ইসলাম সওদাগরের জনপ্রিয়তা ভাংতে ভোটারদের কাছে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। তারা নির্বাচিত হলে বকশিগঞ্জ পৌরসভায় নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি, পরিকল্পিত ভাবে উন্নয়ন মূলক কাজসহ পাশাপাশি পৌরসভাকে দুর্নীতিমুক্ত করবেন বলে প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। এলাকার উন্নয়ন কর্মকান্ডে জনগনের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহন এলাকার উন্নয়ন কর্মকান্ডকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলেও দুই প্রার্থী মনে করেন। অপরদিকে তিন শক্তিশালী প্রার্থীদের অর্থ ও জনবল বেশি থাকায় রেলইঞ্জিন প্রতীক নিয়ে আনোয়ার হোসেন বাহাদুর মেয়র পদের স্বপ্ন পূরণ করতে প্রচারণায় তেমন একটা সুবিধা করতে পারছেন না।
শেষ পর্যন্ত এই পৌরসভা নির্বাচনে ত্রিমুখী হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা
Leave a Reply