কাফি পারভেজ, জামালপুর প্রতিনিধি:
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চর আমখাওয়া ইউনিয়নের পাটাধোয়াপাড়া থেকে মৌলভীরচর পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ঝুঁকির মুখে পড়েছে শতবর্ষী সানন্দবাড়ি বাজার, পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ আশপাশের গ্রামের বসতভিটা ও কৃষিজমি। নদে বিলীন হয়েছে এসব এলাকার বহু কৃষিজমি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, এর আগে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চর আমখাওয়া ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদে ভাঙন দেখা দিলে তা প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ফেলার জন্য দরপত্র আহবান করা হয়। মের্সাস এমইউবিএমএমবি (জেবি) নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। পরে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চলতি বছরের ২৭ মার্চ কাজটি করার অনুমোদন দেওয়া হয়। কাজটি শেষ করার জন্য আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চর আমখাওয়া ইউনিয়নের পাটাধোয়া পাড়ায় ব্রহ্মপুত্র নদে গত জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মাসে ভাঙন দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জিও ব্যাগ ফেলার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। কিন্তু পানি বাড়ার সাথে সাথে জিও ব্যাগ ফেলা অবস্থায় আবারও দেখা দিয়েছে ভাঙন। কোনো কাজেই আসছে না জিও ব্যাগ। ফলে শতবর্ষী সানন্দবাড়ি বাজারের পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের পানি এক সপ্তাহ ধরে বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে নদটি বাজারের খুব কাছে চলে এসেছে। ওই বাজারের পশ্চিম পাশে পাটাধোয়াপাড়া থেকে মৌলভীরচর এলাকায় মন্ডলপাড়া, মুন্সিপাড়া, চুনালীপাড়া, চিথুলীয়া, পশ্চিমপাড়া, পশ্চিম পাটাধোয়াপাড়া, মৌলভীরচর, পাটাধোয়াপাড়া, খোলাবাড়িসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম রয়েছে। গত তিন বছরে এসব এলাকার বেশির ভাগ অংশ নদে বিলীন হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে শতবর্ষী সানন্দবাড়ি বাজারসহ আশপাশের অনেক এলাকা ভাঙনের কবলে পড়তে পারে।
স্থানীয়রা আরো জানান, ভাঙন রোধে বালুর বস্তা কোনো কাজে আসছে না। তাঁদের দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন রোধে স্থায়ী ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। নতুবা ভাঙন অব্যাহত থাকলে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী সানন্দবাড়ি বাজার, ডিগ্রি কলেজ, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, সানন্দবাড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, মৌলভীরচর উচ্চবিদ্যালয়, বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, সানন্দবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মৌলভীরচর আলিম মাদ্রাসা, সানারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সানন্দবাড়ি পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খোলাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি গ্রাম বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সানন্দবাড়ি বাজার বণিক সমিতির সভাপতি গাজীউর রহমান জানান, গত তিন বছরে নদের তীরবর্তী ৮টি গ্রামের প্রায় ৭শ’ পরিবারের ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। ভাঙনের আতঙ্কে প্রায় ৮শ’ পরিবার বসতভিটা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। ইতিমধ্যে নদে বিলীন হয়েছে অন্তত ২শ’ একর কৃষিজমি। এখনো আটটি গ্রামের প্রায় তিন হাজার পরিবার ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। সানন্দবাড়ি বাজারে ছোট-বড় প্রায় ৫শ’ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। এই বাজার থেকে বছরে কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করা হয়। সামান্য পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করছে। ভাঙন আরও ভয়ানক রূপ ধারণ করতে পারে। স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী।
জামালপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, স্থায়ীভাবে ভাঙন প্রতিরোধে বাঁধ নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটির অনুমোদন হলে ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই এলাকায় ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। জিও ব্যাগ ভাঙন রোধে অনেকটা কাজে আসবে।
Leave a Reply