কাফি পারভেজ, জামালপুর প্রতিনিধি:
জামালপুর অনলাইন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি নির্ভীক সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৭ নম্বর আসামির স্ত্রী ছদ্মবেশে নাদিমের বাসায় ঢুকে মামলা প্রত্যাহার করতে চাপ প্রয়োগ করার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার সন্ধ্যায় বকশিগঞ্জ পৌর শহরের কাচারিপাড়া এলাকায় সাংবাদিক নাদিমের বাসায় এই ঘটনাটি ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কালো বোরকা পরিহিত মুখোশধারী মধ্যবয়সী দুই নারী নিহত সাংবাদিক নাদিমের বাসায় প্রবেশ করে। এ সময় বাসায় ছিল সাংবাদিক নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগমসহ পরিবারের বেশ কয়েকজন স্বজন। তাদের ওই নারী দূঃসম্পর্কের আত্মীয় পরিচয় দিচ্ছিলেন। ওই দুই নারীর কথাবার্তায় সন্দেহের সৃষ্টি হয় নাদিমের পরিবারের লোকজনের। একপর্যায়ে তাঁরা ওই দুই নারীর পরিচয় শনাক্ত করতে সক্ষম হন। তাদের একজন নাদিম হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৭ নম্বর আসামি গোলাম কিবরিয়া সুমনের স্ত্রী রুপালি বেগম (৩০) এবং অপরজন স্থানীয় বাসিন্দা কাজলী বেগম (৫০)। আসামি সুমন পৌর শহরের উত্তর বাজার এলাকার বাসিন্দা আনার আলীর ছেলে। আসামি সুমন নাদিম হত্যা মামলায় দীর্ঘদিন কারাভোগের পর কয়েক মাস আগে জামিন পেয়েছেন।
নিহত সাংবাদিক নাদিমের মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত জানান, কাজলী বেগম নামে এক নারীকে সঙ্গে নিয়ে এজাহারভুক্ত আসামি গোলাম কিবরিয়া সুমনের স্ত্রী রুপালি বেগম ছদ্মবেশে তাদের বাসায় যায়। তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা দূঃসম্পর্কের আত্মীয় হন মর্মে জানান। প্রথমে তাঁরা হত্যা মামলা প্রত্যাহার করতে বলেন। পরে আসামি সুমনের নাম চার্জশিটে না দিতে দাবি করেন তাঁরা। এতে তাঁদের ওপর পরিবারের লোকজনের সন্দেহ হয়। মুখোশ পরে থাকায় প্রথমে তাঁদের চিনতে পারেনি। পরে বিষয়টি বকশিগঞ্জ থানা-পুলিশকে জানায়।
সাংবাদিক নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বলেন, আসামি সুমনের স্ত্রী রুপালি বেগম ছদ্মবেশে কাজলী বেগম নামে এক নারীকে সঙ্গে নিয়ে বাসায় এসেছিল। নাদিম হত্যা মামলা প্রত্যাহার করতে আমাদের চাপ দিয়েছে তাঁরা। আমাদের বাসায় সিসি ক্যামেরা আছে কি না, সেটা তাঁরা খোঁজখবর নেয়। বিষয়টি জানালে কয়েকজন সাংবাদিক এবং মঞ্জু মেম্বার বাসায় এসে ওই দুই নারীকে তাঁদের বাড়িতে পৌঁছে দেয়।
উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান জাহিদুর ইসলাম মঞ্জু বলেন, খবর পেয়ে সাংবাদিক নাদিমের বাসায় গিয়ে আসামি সুমনের স্ত্রীসহ দুই নারীকে স্ব-স্ব বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। মূলত মামলার চার্জশিট থেকে সুমনের নাম বাদ দেওয়ার জন্য কথা বলতে তাঁরা ওই বাসায় গিয়েছিল।
বকশিগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ আবদুল আহাদ খান বলেন, খবর পেয়ে সাংবাদিক নাদিমের বাসায় পুলিশ পাঠানো হয়। আসামি সুমনের স্ত্রী ওই বাসায় গিয়ে তাঁর স্বামীর নাম নাদিম হত্যা মামলার চার্জশিটে না দিতে পরিবারের লোকজনের কাছে কাকুতি-মিনতি করেছে বলে জানাতে পারি। পরে পুলিশ যাওয়ার খবর পেয়ে তাঁরা ওই বাসা থেকে চলে যায়। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৪ জুন রাত ১০টার দিকে পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে বাড়ি ফেরার পথে বকশিগঞ্জ উপজেলা সদরের পাটহাটি এলাকায় সাধুরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান (বহিস্কৃত) মাহমুদল আলম বাবু’র নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে টেনে হিচড়ে নামিয়ে ব্যাপক মারধর ও ইট দিয়ে মাথা থেতলে গুরুতর আহত করে। পরদিন ১৫ জুন’২০২৩ ইং বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ৩টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি। ১৬ জুন দুই দফা জানাজার পর বকশিগঞ্জের গুমেরচর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় সাংবাদিক নাদিমকে।
এ ঘটনায় নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বাদী হয়ে ১৭ জুন’২০২৩ ইং বকশিগঞ্জ থানায় মাহমুদুল আলম বাবুসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরো অজ্ঞাত ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যা মামলা তদন্ত কাজ প্রথমে বকশিগঞ্জ থানা পুলিশ থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে হস্তান্তর করা হয়। এখন সিআইডি এ মামলার তদন্ত কাজ করছেন।
গোলাম রাব্বানী নাদিম সাপ্তাহিক বকশিগঞ্জ পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক, বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জেলা প্রতিনিধি ও একাত্তর টিভির বকশিগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি ছিলেন।
Leave a Reply